ঢাকার ফ্ল্যাটগুলোতে একটা সাধারণ সমস্যা – দুপুর বেলাতেও ঘরে অন্ধকার! পাশের বিল্ডিংয়ের ছায়ায় আমাদের জানালা ঢেকে যায়, আর সূর্যের আলো ঢোকে না ঘরে। এই অন্ধকার স্পেসে থাকতে থাকতে মনও খারাপ হয়ে যায়।
খরচ করে দেয়াল না ভেঙ্গে বা নতুন জানালা না কেটেও আপনার ফ্ল্যাটকে আলোকিত করতে পারেন। সাধারণ কিছু ট্রিক্স ব্যবহার করে, কম খরচে, আপনার ঘরকে আরো উজ্জ্বল ও বড় দেখানো সম্ভব।
সঠিক রং
আপনার বাসার রুমগুলোর জন্য সঠিক রং বেছে নিলেই অন্ধকার ঘর অনেকটাই উজ্জ্বল দেখাতে পারেন। আসুন দেখে নেই কোন রংগুলো বেছে নিলে ভালো:
সাদা বা হালকা ক্রিম - এই ক্লাসিক কম্বিনেশন কখনোই আউট অফ ফ্যাশন হয় না। সাদা দেয়াল দিনের আলোকে প্রতিফলিত করে ঘরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দেয়।
হালকা পাস্টেল টোন - নীল, সবুজ বা গোলাপী - এমন হালকা পাস্টেল শেডগুলো আপনার ঘরকে শান্ত রাখে আর সেই সাথে আলোও ভালো লাগে।
হালকা গ্রে - ট্রেন্ডি এই রং একটু মডার্ন লুক দেয় কিন্তু ঘরকে রাখে উজ্জ্বল।
এত হালকা রং দেখে ভাবছেন, তাহলে কি ঘর একদম ফ্যাকাশে লাগবে? একদম না! আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে:
একটা দেয়ালে অ্যাকসেন্ট কালার দিন - বাংলাদেশের রিকশা আর্টে যেসব উজ্জ্বল টারকোয়েজ, সবুজ বা হলুদ রং দেখেন, সেরকম একটা রং দিয়ে ঘরের একটা দেয়াল রাঙিয়ে দিন। ঘরে ঢুকলেই সেই দেয়ালে চোখ যাবে।
রঙিন ফার্নিচার আইটেম নিন - হালকা দেয়ালের সামনে একটা লাল সোফা, বা কমলা রঙের চেয়ার একদম মানানসই হবে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, একসাথে অনেক রঙ ব্যবহার করবেন না।

ঘরে আলো বাড়ানোর জন্য রঙের পাশাপাশি আরো কিছু 'ট্রিক' রয়েছে। :
বড় আয়না ব্যবহার করুন - জানালার বিপরীত দেয়ালে একটা বড় আয়না লাগালে যতটুকু আলো আসে, তা দ্বিগুণ মনে হবে। আয়না আপনার ঘরকে আরো বড়ও দেখাবে। নিউমার্কেট বা গুলশান-বনানী এরিয়ার ফার্নিচার শপগুলোতে আজকাল সুন্দর ফ্রেম করা আয়না পাওয়া যায়।
পিতল বা স্টেইনলেস স্টিলের অ্যাকসেসরিজ রাখুন - বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী পিতলের জিনিসপত্র সহজেই পাওয়া যায়। দেয়ালে পিতলের ঘড়ি, টেবিলে ফুলদানি বা ওয়াল হ্যাঙ্গিং হিসেবে এগুলো ব্যবহার করুন। এরা আলো প্রতিফলিত করে ঘর উজ্জ্বল করবে।
গ্লসি সারফেস ব্যবহার করুন - অল্প জায়গায় চকচকে ফিনিশ সহ ফার্নিচার রাখলে আলো প্রতিফলিত হয়। তবে অতিরিক্ত চকচকে সারফেস একসাথে ব্যবহার করলে ঘর যেন 'স্টিরাইল', সেদিকে খেয়াল রাখুন।
হালকা রঙের ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করুন - আপনার বাসায় যদি গাঢ় রঙের টাইলস থাকে, এর উপর একটা হালকা রঙের কার্পেট বা ফ্লোর ম্যাট বিছিয়ে দিতে পারেন।

ইনডোর লাইটিং
একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন? ফ্ল্যাটে ঢুকলেই একটা বড় ওভারহেড টিউবলাইট থাকে। এই আলো harsh আর অস্বস্তিকর লাগে। আলোকে তিন স্তরে ব্যবহার করতে হবে:
১. মূল আলো (সাধারণ রুমের আলো):
টিউবলাইট ফেলে দিয়ে হালকা এলইডি বাল্ব ব্যবহার করুন
লাইট স্ট্যান্ড/হোল্ডার এ রঙিন বা কাপড়ের শেড লাগিয়ে আলোকে নরম করুন
সিলিং এর সাথে লাইট ফিক্সচার যোগ করুন
২. কাজের আলো (বিশেষ কাজের জন্য আলো):
পড়ার জন্য আলাদা টেবিল ল্যাম্প বা ফ্লোর ল্যাম্প রাখুন
রান্নাঘরের কাউন্টারে ছোট লাইট লাগান
কাজের টেবিলে ল্যাম্প রাখুন
ঢাকাতে বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে সুন্দর ল্যাম্প পাওয়া যায়। নিউমার্কেট, বাইতুল মোকাররম মার্কেট, বা গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটে সহজেই ভালো ডিজাইনের ল্যাম্প পাবেন। অনলাইন শপগুলোতেও এখন ডিজাইনার লাইটিং অ্যাক্সেসরিজ পাওয়া যায়।
৩. সাজসজ্জার আলো (বিশেষ জায়গা আলোকিত করা):
ছবি বা আর্টওয়ার্ক হাইলাইট করার জন্য ছোট আলো
ফেয়ারি লাইট (ঈদ বা পুজোর সময় সবাই ব্যবহার করে, কিন্তু সারা বছরই রাখা যায়!)
একসাথে সব চেঞ্জ করতে হবে না। ধাপে ধাপে শুরু করুন - প্রথমে মূল লাইট আপগ্রেড করুন, তারপর প্রয়োজন মতো একটা টেবিল ল্যাম্প কিনুন, এভাবে আস্তে আস্তে সব লাইট সাজান।

জানালা সাজানোর টিপস
জানালাগুলো হল ঘরে আলো ঢোকার মূল পথ। এগুলো সঠিকভাবে সাজালে আরো বেশি আলো পাবেন:
হালকা পর্দা ব্যবহার করুন - ভারী পর্দার বদলে হালকা, পাতলা কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করুন যাতে আলো ঢুকতে পারে কিন্তু প্রাইভেসি ও থাকে।
জানালা নিয়মিত পরিষ্কার করুন - ঢাকার ধুলোবালি আর দূষণে জানালা আস্তে আস্তে ময়লা হয়ে যায়, যা আলো ঢোকা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত জানালা পরিষ্কার করলে আরো বেশি সূর্যালোক পাবেন।
ডাবল পর্দা ব্যবহার করুন - ভেতরে হালকা শিয়ার পর্দা আর বাইরে ভারী পর্দা ব্যবহার করে দিনের ও রাতের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে পারেন।
জানালার সামনের বাধা সরান - জানালার সামনে বড় ফার্নিচার রাখলে আলো ঢোকা কমে যায়। যতটা সম্ভব জানালার সামনে খালি জায়গা রাখুন।
শেষ কথা
একটা ঘর আলোকিত করা মানে কেবল বালব-টিউবলাইট বা জানালা বড় করা নয়। এটা আসলে অনেকগুলো ছোটখাট পরিবর্তনের সমষ্টি, যা মিলে তৈরি করে আরামদায়ক, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। একটু সময় দিয়ে, একটু চিন্তা করে আপনিও আপনার ঢাকার ফ্ল্যাটকে আলোকিত করে তুলতে পারেন।
আমাদের বাংলাদেশি ঐতিহ্য, রঙের সেন্স আর সৃজনশীলতা ব্যবহার করে আপনার ঘরে যোগ করতে পারেন অনন্য স্থানীয় ছোঁয়া। মনে রাখবেন, ঘর সাজানো শুধু সৌন্দর্য বাড়ানো নয়, এটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
Comentarios