আর্কিটেক্টদের সাথে মিটিং করার সময় কি কি সাথে নিয়ে যাবেন
- Dhaka Designer AML
- Jan 20
- 4 min read
‘বাড়ি’ শব্দটা কি ছোট্ট একটা শব্দ! কিন্তু এর পেছনের স্বপ্ন এবং সাধনা দুটোই আসলে অনেক সময় নিয়ে গড়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়টা এক জীবনের সমান। হ্যাঁ, একটা বাড়ি তৈরিতে একটা জীবন চলে যায়। চলে যায়, সারা জীবনের সঞ্চয়। তবুও মানুষ নিজের একটা বাড়ির স্বপ্ন দেখে একদম শুরু থেকেই। একজন বাবা’র স্বপ্ন তাঁর নিজের একটা বাড়ি হবে। সেই বাড়িতে দুপুরের আলতো রোঁদে বসে পত্রিকা পড়া হবে। কিংবা চা এর কাপে চুমুক দিয়ে রিমোটে চলবে অলস চ্যানেল পরিবর্তন। একজন মা’র ইচ্ছে তাঁর নিজেদের একটা সংসার হবে, হবে নিজের একটা বাড়ি। সেখানে তাঁদের সন্তানরা বড় হবে। থাকবে নিজের রসুইঘর; হয়ত থাকবে এক চিলতে বারান্দা, সেখানেই ছোট ছোট টবে বড় হবে ছোট ছোট স্বপ্ন। তো সেই বাড়িটা বানানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে বাড়ির ডিজাইনটা করানো। আর ডিজাইন করবেন তো একজন আর্কিটেক্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনার সারা জীবনের স্বপ্ন যে বাড়িটা, সেটার ডিজাইন করার জন্য সঠিক আর্কিটেক্ট খুঁজে বের করাটা কি বাড়ি বানানোর চেয়ে কম কঠিন? আর সেই আর্কিটেক্ট কে যখন আপনি পেয়েই গেছেন, তাঁর সাথে মিটিং এ বসার সময় আপনার নিজের তো একটা প্রস্তুতি থাকা লাগবে, না কি? তো সেটার প্রস্তুতিটা ঠিকঠাক সেরে নিতেই আপনার জন্য এই ব্লগ!
০১। জমির সঠিক অবস্থান এবং আশেপাশে কি আছে তা জেনে যাওয়া
নিজের জমির বেলায় এই অংশটা নিয়ে আলাদা করে মাথা ঘামানোর দরকার কম। কিন্তু আমরা অনেকেই অফিসের বস বা বড়ভাই বা আত্মীয়ের জমির ব্যাপারে কথা বলতে আর্কিটেক্টদের সাথে দেখা করি। তখন জমির অবস্থান কোথায় সেটা সঠিকভাবে জানাতে না পারলে ডিজাইনের দিকে আগানো বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। জমি ঢাকার ভিতরে না বাইরে, গ্রামে না উপজেলায়, বাজারের পাশে না হাইওয়ের ধারে, এই জিনিসগুলো জানা কিন্তু খুবই জরুরি।

একেক জায়গায় বাড়ি বানানোর নিয়ম একেকরকম। তাই আর্কিটেক্ট এর কাছে যাবার সময় জমির সঠিক অবস্থানটা সাথে নিয়ে যাবেন। সম্ভব হলে গুগল ম্যাপ বের করে জমির লিঙ্ক পাঠিয়ে দিন আর্কিটেক্ট এর হোয়াটস-অ্যাপে কিংবা ই মেইলে। জমির কিছু ছবি তুলুন কিংবা যোগাড় করুন, সাথে নিয়ে যান সেগুলোও। মনে রাখবেন, আপনার জমির ডিটেইলিং আপনি যতটা নিখুঁতভাবে আপনার আর্কিটেক্ট কে দিতে পারবেন, উনি তত সহজে এবং দ্রুত ডিজাইন শুরু করতে পারবেন।
০২। ডিজিটাল সার্ভে ড্রইংজমির পরিমাণ জানার জন্য দরকার ডিজিটাল সার্ভে। অনেকেই সময় কিংবা টাকা বা দুটোই বাঁচানোর জন্য হাতে জমি মেপে কোনমতে হাতে একটা ছবি এঁকে আর্কিটেক্ট এর কাছে চলে যান, যেটা আদতে কোন কাজেই আসে না। আপনাকে অবশ্যই সার্ভে করতে হবে। আপনার জমি যদি ঢাকার আশেপাশে হয়, একটু গুগল করলেই হাজার হাজার সার্ভেয়ার পাবেন। গ্রামে হলে LGED’র ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য নিতে পারেন। আর একেবারেই না পারলে মিটিং এর আগেই আর্কিটেক্টকে বলুন সার্ভে করার জন্য সাহায্য করতে। এরপর সেটা সাথে করে নিয়ে আসুন। পাশাপাশি আরও ভালো হয় যদি সয়েল টেস্ট ও করা থাকে। তাহলে প্রথম মিটিং এই বাড়ি তৈরির খরচ সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেয়ে যেতে পারেন।
০৩। স্পেইস প্রোগ্রাম
এটার মানে হচ্ছে কোথায় কি হবে সেটার একটা বেসিক ধারণা রাখা। আপনি যদি এপার্টমেন্ট বানানোর ইচ্ছে নিয়ে আর্কিটেক্ট এর কাছে যান, তাহলে কয়টা বেডরুম, বাথরুম, বারান্দা চান সেটা আগেই ভেবে যাবেন। পাশাপাশি সার্ভেন্ট বেড হবে কি হবে না, লিফট কয়টা হতে পারে বা আদৌ হবে কি না সে সবও নোট করে নিয়ে যাবেন। যদি ডুপ্লেক্স বানাতে চান, তাহলে নিচতলায় কি কি থাকবে, দোতলায় কি কি থাকবে, এমনকি বেডরুমের মিনিমাম সাইজ কত, ওয়াক ইন ক্লোজেট হবে কি না: এ সব নিয়ে ভাবুন এবং নোট করে ফেলুন। এতে করে আপনার আর্কিটেক্ট প্রথম মিটিং এই আপনার স্বপ্নের বাড়িটা সম্পর্কে অনেকখানি ধারণা পেয়ে যাবেন।

০৪। বাজেটের আইডিয়া
বাড়ি বানানোর জন্য তো অবশ্যই টাকা দরকার। প্রশ্ন হচ্ছে, কত টাকা হলে আমি আমার স্বপ্নের বাড়িটা বানাতে পারব? এই প্রশ্নটা কিন্তু আরেকভাবেও করা যায়:
“এত টাকার মধ্যে আমার বাড়িটা কি এভাবে করা সম্ভব?”
দুটো প্রশ্নের উত্তরেই আপনার নিজের বাজেট নিয়ে আপনার নিজের একটা ক্লিয়ার আইডিয়া থাকা দরকার। আপনার বাড়ি আপনি কত টাকার ভিতরে বানাবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন। সেই বাজেটটা আপনার আর্কিটেক্টকে বলুন। এখানে লজ্জার বা লুকানোর কিছু নাই। বাড়িটা আপনার, তাই যে বাজেটেই বাড়ি করবেন, বলে ফেলুন।

এমন হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে আপনার বাজেটে আপনার মন মত বাড়ি বানানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সময় নিয়ে টাকা জমিয়ে দু’বছর পরে আবার বাড়ির কাজে হাত দিতে পারেন। কিংবা আপনার বর্তমান বাজেটের সাথে মিল রেখে বাড়ির প্ল্যানে আনতে পারেন পরিবর্তন। দুটোই একদমই স্বাভাবিক প্র্যাকটিস, কোন সমস্যা নেই।
০৫। কনসাল্টেন্সি ফি’র আইডিয়া
আর্কিটেক্ট আপনার ডিজাইন করবেন অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। এটাই আর্কিটেক্টদের কনসালটেন্সি ফি। তাই এই ফি টা আপনার বাজেটের সাথে ফিট হচ্ছে কি না, সেটা জানাও তো দরকার, না কি? তাই নিঃসংকোচে কথা বলুন কনসালটেন্সি ফি নিয়ে। আর্কিটেক্টরা বাড়ির স্কয়ার-ফিট, বাজেট বা লাম্প-সাম: এমন বিভিন্ন উপায়ে তাঁদের ফি নির্ধারণ করে থাকেন। এক্সপেরিয়েন্স বাড়ার সাথে সাথে আর্কিটেক্টদের কনসালটেন্সি ফি এবং তাঁদের ডিজাইন কোয়ালিটি দুটোই বাড়তে থাকে। তাই হিসেব নিকেশ করে নিজের প্রায়োরিটি ঠিক করুন, যেন আর্কিটেক্ট এর সাথে দেখা করতে এসে আপনাকে কোন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে না হয়!
০৬। আপনার গল্প এবং স্বপ্ন
এই অংশটা আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কেন বাড়ি বানাতে চাচ্ছেন, সেই বাড়িটা দেখতে কেমন হতে পারে, সেখানে কে কে থাকবে, তাঁদের জন্য বাড়িতে কি কি আপনি রাখতে চান: এ সব কিছুই আসলে আপনার বাড়ি তৈরি’র পেছনের কারণ। বাড়িতে কি নিয়মিত ভাবে থাকবেন, না কি ভ্যাকেশান হাউজ হিসেবে ইউজ করবেন, বাগান বাড়ি হলে বছরে কতদিন থাকতে পারেন: এগুলো ও ভাবুন। বাড়িতে কতটুক সময় আপনি থাকবেন তার উপরে বাড়ির ম্যাটেরিয়ালস কি কি হবে, তা মেইনটেইন করতে কি রকম ঝামেলা হবে, সেগুলো মাথায় রেখেই আর্কিটেক্ট কে ডিজাইন করতে হবে। সর্বোপরি, যদি আপনার পছন্দের যদি অন্য কোন বাড়ি থাকে সেগুলো দেখান। তাহলে আপনার স্টাইল বা রুচি সম্পর্কে আপনার আর্কিটেক্ট একটা ভালো ধারণা পাবেন।

একজন আর্কিটেক্ট আসলে আপনার চাওয়া, আপনার স্বপ্ন এবং আপনার সাধ্যকে সমন্বয় করে আপনার স্বপ্নের বাড়িকে আপনার সামনে নিয়ে আসেন। এটাই আর্কিটেক্ট এর কাজ। মনে রাখবেন, একজন আর্কিটেক্ট আপনার জন্য আপনার বাড়িটা কে আপনার মন মত তৈরি করার চেষ্টা করবেন। আর তাই আপনি নিজে আসলে কি চান, সেটা আগে জানা খুবই জরুরি। সাথে জরুরি এই প্রস্তুতিগুলো নিয়ে আর্কিটেক্ট এর কাছে যাওয়া।
এই লেখায় আলোচ্য পয়েন্টগুলো সাধারণত রেসিডেন্সিয়াল বাড়ি বা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর জন্য প্রযোজ্য। আলাদা ধরণের বিল্ডিং টাইপের জন্য আলাদা আলাদা জিনিস সাথে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে যে আর্কিটেক্ট এর সাথে দেখা করতে যাবেন, তাঁদের এক সপ্তাহ আগেই ফোন দিয়ে দেখা করার সময় সাথে কি কি আনলে ভালো হবে, সেটা জেনে নিতে পারেন। ঢাকা ডিজাইনারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করতে এই লিঙ্কে মেসেজ দিতে পারেন অথবা সরাসরি +8801701357825 এ কল করে এপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারেন
Opmerkingen