বাড়ি বানানো তো প্রত্যেকেরই স্বপ্ন! কিন্তু যখন বাজেট সীমিত, তখন এই খরচ কীভাবে কমাবেন, সেটা একটা বড় চিন্তার বিষয়। আজকে আমরা কথা বলব কম খরচে কীভাবে আপনার বাড়ি বানাতে পারবেন সে সম্পর্কে।
বাড়ির খরচ কমানো
খরচ কমানোর প্রশ্নটা আসলে দুটো ভিন্ন অবস্থা থেকে আসতে পারে:
১. আগে থেকেই নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করা: আপনি যদি শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে বাড়ি বানাবেন, তাহলে সেই অনুযায়ী প্ল্যান করতে হবে।
২. কাজ শুরু করার পর খরচ কমানো: বাড়ি বানানো শুরু করে দিয়েছেন, এখন বাকি কাজের খরচ কমাতে চাচ্ছেন।
প্রথমেই দরকার একজন দায়িত্বশীল কন্সালট্যান্ট
বাড়ি বানানোর খরচ কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একজন দায়িত্বশীল আর্কিটেক্ট বা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ। তাঁর দুটো গুণ অবশ্যই থাকতে হবে:
দায়িত্বশীলতা: আপনার বাজেট ৫০ লাখই হোক বা ১০ কোটিই হোক, সেটাকে রেস্পেক্ট করে ডিজাইন করা।
অভিজ্ঞতা: অভিজ্ঞতা ছাড়া সীমিত বাজেটে ভালো ডিজাইন করা সম্ভব নয়।
একজন ভালো কনসাল্ট্যান্ট আপনাকে এমন ডিজাইন দেবেন যেখানে:
অপ্রয়োজনীয় জায়গা নষ্ট হবে না (যেমন ১২০০ স্কয়ার ফিটের প্রয়োজন থাকলে ১৬০০ স্কয়ার ফিট ডিজাইন করা)
কখনওই ব্যবহার হবেনা এমন করিডোর বা স্পেস থাকবে না
প্রয়োজনের অতিরিক্ত রড, বিম, স্ল্যাব দেওয়া হবে না

কোথায় খরচ কমানো সম্ভব নয়
কিছু জায়গা আছে যেখানে খরচ কমানোর সুযোগ খুব কম:
ইট, বালি, সিমেন্ট, রড: এইসব মেটেরিয়ালের দাম প্রায় ফিক্সড থাকে।
কলাম, বিম, স্ল্যাব: স্ট্রাকচারাল এলিমেন্টে কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়।
সিমেন্টের দাম সব কোম্পানিতে প্রায় একই থাকে। ইটের দামও এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না, সাধারণত চার আনা-আট আনার বেশি তফাত হয় না।
কোথায় বড় সাশ্রয় করা যায়
খরচ কমানোর আসল সুযোগ আসে ফিনিশিং মেটেরিয়ালে:
১. টাইলস
কম দামি টাইলস ব্যবহার করলে বাড়ি ভেঙে পড়বে না! বেশি দামি আর কম দামি টাইলসের মধ্যে পার্থক্য মূলত লুকস নিয়ে। কম দামে ভালো দেখতে টাইলস এখন অনেক পাওয়া যায়।
২. জানালা-দরজা
এখানেও বিভিন্ন অপশন আছে:
অ্যালুমিনিয়াম, কাঠ বা মেটাল ফ্রেম
স্লাইডিং ডিজাইন
৩. বাথরুমের ফিটিংস
বাংলাদেশের লোকাল বাথরুম ফিটিংসগুলো আসলে বেশ ভালোই। চাইনিজ বা ইউরোপিয়ান ফিটিংস ব্যবহার করলে খরচ ৩ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে!
খরচ নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল ধাপ
১. প্রপারলি ডিজাইন করা: শুরু থেকেই বাজেট-ফ্রেন্ডলি ডিজাইন করা।
২. কনস্ট্রাকশন পর্যায়ে সতর্কতা: ভালো কন্ট্রাক্টর নেওয়া যাঁরা মেটেরিয়াল নষ্ট করবেন না। সাথে কম দামে মেটেরিয়াল সংগ্রহের উপায় খোঁজা।
৩. ফিনিশিং মেটেরিয়ালে নিয়ে সিদ্ধান্ত: টাইলস, জানালা-দরজা, ফিটিংস, সাজসজ্জার জিনিসপত্র - এসবে বাজেট-ফ্রেন্ডলি সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বিস্তারিত এস্টিমেট নেওয়া জরুরি
ডিজাইন হয়ে যাওয়ার পরেই অবশ্যই একটি বিস্তারিত এস্টিমেট করিয়ে নিন। অনেকে শুধু ডিজাইন করান কিন্তু বিল অফ কোয়ান্টিটি (BOQ) বা এস্টিমেট নেন না। এস্টিমেটে থাকা উচিত:
কত বস্তা সিমেন্ট লাগবে
প্রতিটি মেটেরিয়ালের বর্তমান দাম
টাইলস, গ্রিল, জানালা, দরজার পরিমাণ ও দাম
এই তথ্য থাকলে আপনি:
দাম পরিবর্তন হলে আগে থেকে বুঝতে পারবেন
বেটার ডিল খুঁজতে পারবেন
খরচ সামঞ্জস্য করতে পারবেন
বাজেট নিয়মিত ফাইন-টিউন করতে পারবেন
বাজেট নিয়ন্ত্রণের মূল বিষয় হল ট্রান্সপারেন্সি। বাড়ি বানাতে কি কি লাগবে, কোথায় কত খরচ হবে - এসব আগে থেকে জানা থাকলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
মনে রাখবেন, ভালো এবং সুন্দর বাড়ি মানেই সাধ্যের বাইরে যাওয়া নয়। সঠিক পরিকল্পনা আর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সীমিত বাজেটেও আপনি একটি সুন্দর, টেকসই বাড়ি বানাতে পারেন।
Comments