সচারচর পাশ করার পর আর্কিটেক্টরা দুই ধরনের পেশায় জড়িত হয়।
একদল নিজের প্র্যাকটিস শুরু করে আর আরেক দল চাকরি করে।
যারা চাকরি করে, তাদের মধ্যে আবার দুটো ভাগ করা যায়। একদল বিভিন্ন ফার্মে চাকরি করে আরেক দল কর্পোরেশন গুলোতে চাকরি করে। এরাই মূলত পরবর্তীতে কমার্শিয়াল আর্কিটেক্টে পরিণত হয়। আর যারা প্র্যাকটিস করে তারা আস্তে আস্তে নিজেদের একটা ফার্ম দাঁড় করায়। এবং সেখান থেকে তাদের আর্কিটেকচার প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করতে থাকে।
ডিজাইন
স্থাপনা ডিজাইন
হ্যাঁ আর্কিটেক্টদের মূল কাজ ডিজাইন করা। সেটা বাড়ি কিংবা যে কোন স্থাপনা হতে পারে। আর্কিটেক্টরা বাড়ির ডিজাইন করেন, সে বাড়িটা কুঁড়েঘর থেকে বহুতল ভবন যে কোন কিছু হতে পারে। বুর্জ খলিফা যেমন আর্কিটেক্টরা ডিজাইন করেন, তেমনি সমুদ্রের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য একচালা ঘর গুলো কোন না কোন আর্কিটেক্ট এর ই ডিজাইন করা।
কমার্শিয়াল স্পেস ডিজাইন
আর্কিটেক্টরা আরও ডিজাইন করেন কমার্শিয়াল স্পেস। কমার্শিয়াল স্পেস আবার কি? এটা হচ্ছে অফিস, বিভিন্ন শপিং মল, হোটেল, পাবলিক প্লেস ইত্যাদি যেসব জায়গা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয় তা। এর পাশাপাশি আর্কিটেক্টরা ডিজাইন করে। বিভিন্ন সরকারি কিংবা বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তারা ডিজাইন করেন। বিভিন্ন ধরনের মনুমেন্ট ডিজাইন আর্কিটেক্টদের দায়িত্বে। বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধ ডিজাইন করেছেন আর্কিটেক্ট সৈয়দ মইনুল হোসেন।
আর্কিটেক্টরা মিউজিয়ামও ডিজাইন করেন। আবার একটা পার্কও কিন্তু আর্কিটেক্টরাই ডিজাইন করেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে আর্কিটেক্টরা আসলে স্পেস ডিজাইন করেন। একটা স্পেসে যে কোন কিছু থাকতে পারে, সেটা একটা বাড়ি হতে পারে হতে পারে, কোন একটা এক্সিবিশনও হতে পারে। কিউরেটর হিসেবেও আর্কিটেক্টরা কাজ করেন।
প্রোডাক্ট ডিজাইন
এর বাইরেও আর্কিটেক্টরা বিভিন্ন জিনিস ডিজাইন করে থাকেন। হতে পারে সেটা কোন প্রোডাক্ট। এখন প্রোডাক্ট বলতে কি বোঝায়? প্রোডাক্ট যে কোন কিছুই হতে পারে। আপনার আমার ব্যবহার্য যে কোন জিনিসই আসলে প্রোডাক্টের আওতায় পড়ে। আর্কিটেক্টদের মূল কাজ হল ইউজারের চাহিদা বুঝে সে অনুসারে কোন কিছু ডিজাইন করা। প্রচুর আর্কিটেক্ট আছেন, যারা প্রোডাক্ট ডিজাইনে দক্ষতা অর্জন করেছেন। মোটা দাগে আর্কিটেক্টদের কাজ বলতে আমরা যে বাড়ি কিংবা যে কোন স্থাপনা ডিজাইন বুঝি, তার বাইরে গিয়ে উনারা বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট ডিজাইন করছেন। ডিজাইন করছেন প্যাকেজিং, ডিজাইন করছেন বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র।
নৌকা থেকে শুরু করে চামচ, কেটলি সবকিছুই ডিজাইনের পেছনে আর্কিটেক্টদের হাত আছে প্রচুর। আর্কিটেক্টরা ভবন কিংবা বড় স্থাপনা থেকে সরে এসে এসব জিনিসও ডিজাইন করেন।
গ্রাফিক ডিজাইন
ডিজাইনের অংশ হিসেবেই আসে গ্রাফিক ডিজাইন। অনেক আর্কিটেক্ট ইলাস্ট্রেটর কিংবা গ্রাফিক ডিজাইনার বাণিজ্যিকভাবে গ্রাফিক ডিজাইন করে পেশা নির্বাহ করছেন
সৃস্টি সুখের উল্লাসে!
একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্যান্য পেশা থেকে ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে যাওয়ার নমুনা দেখা গেলেও সেটা তুলনামূলক কম। আর্কিটেক্টদের বেলায় এটা অনেক বেশি যেহেতু আর্কিটেকচার একটা ক্রিয়েটিভ জগত। সে জন্য আর্কিটেক্টরা পেশা হিসেবে আর্কিটেকচার বাদেও বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ জায়গায় ইনভল্ভ হন।
ফটোগ্রাফি
একটা বড় উদাহরণ হতে পারে ফটোগ্রাফি। প্রচুর আর্কিটেক্ট আছেন যারা খুবই নামকরা ফটোগ্রাফার। বাংলাদেশের ইতিহাসের তর্ক-সাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন একজন আর্কিটেক্ট ছিলেন। বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে হেঁটে বাংলার মুখে তুলে এনেছেন তার ক্যামেরায়। এর বাইরেও আর্কিটেকচার ফটোগ্রাফি ফটোগ্রাফি জগতের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। একজন ভালো আর্কিটেকচার ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য আর্কিটেকচার বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকার অনেক জরুরী। যেহেতু আর্কিটেক্টারা সৃষ্টিশীল মানুষ এবং তাদের পয়েন্ট অফ ভিউটা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়, পার্সপেক্টিভ টা আলাদা হয়; সে কারণে প্রচুর আর্কিটেক্ট যারা ভালো ফটোগ্রাফার, তারা আর্কিটেকচারাল ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন।
ভিডিওগ্রাফি
অনেক আর্কিটেক্ট আবার ভিডিওগ্রাফি করেন। ভিডিওগ্রাফির মধ্যে আসতে পারে ফিল্মমেকিং, ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকিং, ফিচার ফিল্ম মেকিং, সিনেমাটোগ্রাফি এমনকি ওয়েডিং ভিডিওগ্রাফি ও এর আওতায় পড়ে। ফ্রেম এবং পার্সপেক্টিভ সম্পর্কে আলাদা পড়াশোনা থাকার কারণে এই ব্যাপারগুলো আর্কিটেক্টদের জন্য অনেক সুবিধা জনক হয়; যেটা হয়তো অন্য অনেক পেশার মানুষের জন্যই এতটা সহজ হয় না।
রাইটার
আর্কিটেক্টদের মধ্যে অনেকেই রাইটার হিসেবে কাজ করেন। তারা আর্কিটেকচার বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেন, বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ওয়েবসাইটে কিংবা মিডিয়াতে লেখালেখির জায়গাটায় প্রচুর আর্কিটেক্টদের বিচরণ দেখা যায়।
রিচার্স ও একাডেমিক পেশা
আবার আর্কিটেক্টদের একটা অংশ হয়ে যান গবেষক তারা মূলত একাডেমিক সেক্টরে যোগ দেন। তারা পড়ান, বিভিন্ন ধরনের আর্কিটেকচার নিয়ে গবেষণা করেন, নিবন্ধ প্রকাশ করেন জার্নালের সাইটেশন করেন।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা
আর্কিটেক্টদের একটা বড় অংশ ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এদের মধ্যে একদল থাকেন উদ্যোক্তা আর একদল কনস্ট্রাকশন বিজনেস নিয়ে কাজ করেন। রিয়েলস্টেটে প্রচুর আর্কিটেক্টদের ব্যবসায়ী হিসেবে দেখা যায়। দেশের এবং দেশের বাইরে অনেক বড় বড় রিয়াল-স্টেট কোম্পানির মালিক মূলত আর্কিটেক্টরা। হাসপাতাল যেমন অনেক ডাক্তাররা মিলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু করেন, তেমনি আর্কিটেক্ট এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের একসাথে এসে শুরু করার নজির ও দেখা যায়।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
এক দল আর্কিটেক্ট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এও যুক্ত হন। তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যানেজ করেন। তারা হয়তো সরাসরি ডিজাইন কিংবা ইমপ্লিমেন্টেশনে কাজ করেন না কিন্তু পুরো প্রজেক্টটা ম্যানেজ করা অর্থাৎ অন্যান্য আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং সকল স্টেক হোল্ডারকে একসাথে নিয়ে পুরো প্রজেক্ট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাঁড় করানো অনেক আর্কিটেক্ট এর পেশা।
এ তো গেল কিছু কমন প্রফেশন যেগুলো আর্কিটেক্টদের সচারচর জড়িত থাকতে দেখা যায়। এর বাইরেও অনেকে অনেক কিছু করেন। অনেকে শখের বশেও শুরু করে সেই বিষয়ে এত ভালো করেন যে পরে সেটাই পেশা হিসেবে নিয়ে নেন। অনেকে যেমন মিউজিক করেন, কেউ হয়ত ফার্মিং ও করেন। আপনার পরিচিত কোন আর্কিটেক্ট কি ভিন্ন কোন পেশায় সফলতার সাথে কাজ করছেন?
Comments